বাংলাদেশ ও ভারতের জন্য পারস্পরিক কল্যাণমূলক সুসম্পর্ক অপরিহার্য।
এক প্রশ্নের জবাবে তৌহিদ হোসেন বলেন, বাংলাদেশ বিশ্বাস করে যে পারস্পরিক কল্যাণমূলক সুসম্পর্ক বাংলাদেশ ও ভারতের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। তিনি আরও বলেন, ওমানে ভারতের পররাষ্ট্রমন্ত্রী এস. জয়শঙ্করের সঙ্গে তার ফলপ্রসূ বৈঠক হয়েছে, যেখানে উভয়ে পরস্পরের দৃষ্টিভঙ্গি ভালোভাবে বুঝতে পেরেছেন। সম্পর্ক উন্নয়নের পরবর্তী পদক্ষেপ নিয়ে আলোচনা হয়েছে এবং তারা প্রস্তাব করেছেন যে, দুই পক্ষের সম্মতিতে ভবিষ্যতে বিভিন্ন পর্যায়ে বৈঠকের আয়োজন করা সম্ভব হলে তা দ্বিপাক্ষিক সম্পর্ক উন্নয়নে সহায়ক হবে।
তিনি বলেন, ৫ আগস্টের রাজনৈতিক পরিবর্তনের পর বাংলাদেশ-ভারত সম্পর্ক কিছুটা অনিশ্চয়তার মুখে পড়েছিল। তবে আমরা চাই, উভয় দেশ এই পরিস্থিতি কাটিয়ে উঠবে, একে-অপরের প্রয়োজন বুঝবে এবং সম্পর্ক উন্নয়নের পথে এগিয়ে যাবে।
কোন ধরনের পদক্ষেপ নিয়ে আলোচনা হয়েছে—এমন প্রশ্নের জবাবে তৌহিদ হোসেন বলেন, কিছু সময়ের জন্য দুই দেশের বাণিজ্য স্থবির হয়েছিল বা হ্রাস পেয়েছিল, তবে এখন তা আবার বৃদ্ধি পেয়েছে এবং বেসরকারি খাতও ভালো করছে।
আগামী এপ্রিলে অনুষ্ঠেয় বিমসটেক সম্মেলনে প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস ও ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির মধ্যে বৈঠকের সম্ভাবনা নিয়ে প্রশ্ন করা হলে তিনি বলেন, বিমসটেক সম্মেলনে সাধারণত সব রাষ্ট্র ও সরকারপ্রধানরা একে-অপরের সঙ্গে দেখা করেন। তাই সেখানে দুই নেতার বৈঠকের একটি সম্ভাবনা রয়েছে।
বাংলাদেশে সংখ্যালঘুদের ওপর কথিত নিপীড়ন নিয়ে ভারতের অভিযোগ সম্পর্কে এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, গত পাঁচ মাসে ভারতীয় সংবাদমাধ্যমে এ বিষয়ে অনেক অতিরঞ্জিত ও বিভ্রান্তিকর প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়েছে। হিন্দুসহ অন্যান্য সংখ্যালঘুরা বাংলাদেশের সমান অধিকারসম্পন্ন নাগরিক এবং তারা আইনগতভাবে সমান সুরক্ষা পান। তিনি আরও বলেন, "আমরা আমাদের সংখ্যালঘুদের দেখভাল করব, ভারত তাদের সংখ্যালঘুদের দেখভাল করবে।"
সীমান্ত ইস্যুতে এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, সীমান্ত সংক্রান্ত কোনো সমঝোতা পরিবর্তনের বিষয়ে আমি এখন পর্যন্ত কিছু শুনিনি। তবে সীমান্তের মূল সমস্যা হলো, বিএসএফ নিরীহ মানুষদের গুলি করে হত্যা করছে, যা কোনো বন্ধুত্বপূর্ণ দেশের সীমান্তে হওয়া উচিত নয়। সীমান্তে অপরাধের কথা বলা হয়, কিন্তু কেউ যদি আইন লঙ্ঘন করে, তাকে আটক করে আদালতে বিচার করা যেতে পারে—কিন্তু সরাসরি হত্যা করা ঠিক নয়, এমনকি যদি তারা অপরাধ করেও থাকে। দুই দেশের সীমান্ত বাহিনীর বৈঠকে এসব বিষয়ে আলোচনা হবে।
বাংলাদেশ-পাকিস্তান সম্পর্ক নিয়ে এক প্রশ্নের জবাবে তৌহিদ হোসেন বলেন, অন্যান্য দেশের মতো বাংলাদেশও পাকিস্তানের সঙ্গে সম্পর্ক স্বাভাবিক রাখতে চায়। তবে এই সম্পর্ক ভারতের নিরাপত্তার জন্য কোনো হুমকি সৃষ্টি করবে কি না—এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, "আমি মনে করি না যে, বাংলাদেশ-পাকিস্তান সম্পর্ক ভারতের নিরাপত্তার ওপর কোনো নেতিবাচক প্রভাব ফেলবে। আমরা এমন কিছু করব না, যাতে ভারতের অভ্যন্তরীণ নিরাপত্তা ঝুঁকির মুখে পড়ে।"
ট্রাম্প প্রশাসনের সঙ্গে বাংলাদেশের সম্পর্ক নিয়ে এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ট্রাম্প প্রশাসন সম্প্রতি ক্ষমতায় এসেছে এবং যুক্তরাষ্ট্রের নীতিতে বেশ কিছু পরিবর্তন আসছে। ভবিষ্যতে কী হবে, তা এখনই বলা কঠিন। তবে যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে বাংলাদেশের সম্পর্ক অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ, এবং আমরা সেটি বজায় রাখতে সর্বোচ্চ চেষ্টা করব। যদি নীতিতে পরিবর্তন আসে, তাহলে বাংলাদেশ সেই পরিবর্তনের সঙ্গে খাপ খাইয়ে চলার চেষ্টা করবে।
ধানমন্ডি ৩২ নম্বরের বাড়িতে হামলা ও ভাঙচুরের বিষয়ে এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, এটি সম্ভবত সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার প্ররোচনামূলক বক্তব্যের প্রতিক্রিয়া হতে পারে, যিনি বর্তমানে ভারতে অবস্থান করছেন। তিনি আরও বলেন, "আমি মনে করি, শেখ হাসিনা যতদিন ভারতে থাকবেন, ততদিন তার চুপ থাকা উচিত।" তবে ভাঙচুরের ঘটনাটি বাংলাদেশের অভ্যন্তরীণ বিষয়, তাই এটি নিয়ে ভারতের উদ্বিগ্ন হওয়ার কোনো কারণ নেই।
বাংলাদেশে ভারতীয় প্রকল্পগুলো নিয়ে এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, এটি একটি চলমান প্রক্রিয়া, এবং আমি মনে করি না যে কোনো প্রকল্প স্থগিত করা হয়েছে।