ফ্যাসিবাদবিরোধী লড়াইয়ের সবাইকে নিয়ে সরকার গড়বে বিএনপি: ফখরুল

 "ফ্যাসিবাদবিরোধী লড়াইয়ের সবাইকে নিয়ে সরকার গড়বে বিএনপি: ফখরুল"


বাংলাদেশের বর্তমান রাজনৈতিক পরিস্থিতি অত্যন্ত তীব্র ও উত্তেজনাপূর্ণ। ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ সরকারের বিরুদ্ধে বিভিন্ন রাজনৈতিক দল, বিশেষ করে বিএনপি (বাংলাদেশ ন্যাশনালিস্ট পার্টি), বারবার অভিযোগ করে আসছে যে, দেশের গণতান্ত্রিক কাঠামো ধ্বংসের চেষ্টা চলছে এবং ফ্যাসিবাদী শাসন প্রতিষ্ঠিত হচ্ছে। এসব অভিযোগের মধ্যে অন্যতম ছিল বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরের সাম্প্রতিক বক্তব্য, যেখানে তিনি দাবি করেন, "ফ্যাসিবাদবিরোধী লড়াইয়ের সবাইকে নিয়ে সরকার গড়বে বিএনপি।"

এই বক্তব্যটি একদিকে সরকারের বিরুদ্ধে বিএনপির কঠোর অবস্থানকে স্পষ্ট করেছে, অন্যদিকে বিএনপির পক্ষ থেকে দেশের রাজনীতির ভবিষ্যৎ নিয়ে এক নতুন দৃষ্টিভঙ্গি প্রতিস্থাপন করেছে। ফখরুলের মন্তব্যের মাধ্যমে যে রাজনৈতিক বার্তা দেওয়া হয়েছে, তা শুধু বিএনপির বর্তমান অবস্থানকেই প্রতিফলিত করে না, বরং ভবিষ্যতের পরিকল্পনাও তুলে ধরে।

ফ্যাসিবাদবিরোধী লড়াই: ফখরুলের প্রতিক্রিয়া

ফ্যাসিবাদবিরোধী আন্দোলনের কথা উল্লেখ করে ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, আওয়ামী লীগ সরকার একটি ফ্যাসিবাদী সরকার, যা ক্ষমতা দখল করে জনগণের মৌলিক অধিকার হরণ করেছে। সরকারের বিরুদ্ধে চলমান আন্দোলন, বিশেষত বিএনপির নেতৃত্বে, হচ্ছে জনগণের অধিকার ফিরিয়ে আনার এবং স্বৈরাচারী শাসনের বিরুদ্ধে প্রতিরোধ গড়ে তোলার একটি বৃহত্তর উদ্যোগ।

ফ্যাসিবাদ শব্দটির অর্থ শুধু স্বৈরাচারী শাসক নয়, এটি এমন একটি শাসন ব্যবস্থা, যেখানে ব্যক্তিগত স্বাধীনতা, বাকস্বাধীনতা, গণতন্ত্র ও মানবাধিকারের প্রতি বিরোধিতা থাকে। ফখরুল এই শব্দটি ব্যবহার করে সরকারের শাসনব্যবস্থাকে চিহ্নিত করছেন, যেখানে তিনি মনে করেন, সরকারের সমস্ত পদক্ষেপ জনগণের জন্য ক্ষতিকর এবং অসাংবিধানিক।

তিনি সরকারের বিরুদ্ধে তার আক্রমণে বলেন, "বর্তমান শাসকগোষ্ঠী মানুষের বাকস্বাধীনতা, প্রতিবাদ ও রাজনৈতিক অধিকার কেড়ে নিয়েছে। তারা রাষ্ট্রীয় শক্তির অপব্যবহার করে বিরোধী দলের নেতাকর্মীদের দমন করছে এবং গণতান্ত্রিক প্রতিষ্ঠানগুলোকে পদদলিত করছে।" এসব অভিযোগের মাধ্যমে তিনি দেশের বর্তমান রাজনৈতিক পরিস্থিতির প্রতি গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন।

একটি জাতীয় ঐক্যবদ্ধ সরকার গঠনের প্রস্তাব

মির্জা ফখরুল যে বক্তব্যে "সবাইকে নিয়ে সরকার গড়বে বিএনপি" বলে দাবি করেছেন, তা বেশ গুরুত্বপূর্ন। এটি শুধু বিএনপির নির্বাচনী এজেন্ডা বা পরিকল্পনা নয়, বরং একটি বৃহত্তর রাজনৈতিক চেষ্টার ইঙ্গিতও হতে পারে। ফখরুল বলেছেন, বিএনপি এককভাবে ক্ষমতায় আসতে চায় না, বরং তারা সকল রাজনৈতিক দল ও জনগণের সমন্বয়ে একটি জাতীয় ঐক্যবদ্ধ সরকার গঠন করতে চায়।

ফখরুলের বক্তব্যে যা স্পষ্ট তা হলো, বিএনপি একটি অন্তর্ভুক্তিমূলক সরকার গঠনের ধারণা নিয়ে এগোতে চায়। তিনি বলেন, বিএনপি শুধুমাত্র তাদের দলের জন্য নয়, বরং দেশের সব নাগরিকের স্বার্থে কাজ করবে। সরকারের বিরুদ্ধে আন্দোলনের লক্ষ্য হলো জনগণের অধিকার ফিরিয়ে আনা এবং একটি গণতান্ত্রিক রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠা করা। এর মাধ্যমে বিএনপি এমন একটি সমাজব্যবস্থা প্রতিষ্ঠা করতে চায়, যেখানে জনগণের মতামত, অংশগ্রহণ এবং অধিকার সুরক্ষিত থাকবে।

তিনি দাবি করেছেন, "বিএনপি কখনোই এককভাবে শাসন করবে না। আমাদের লক্ষ্য একটি জাতীয় ঐক্যবদ্ধ সরকার প্রতিষ্ঠা করা, যেখানে সমস্ত রাজনৈতিক দল এবং জনগণের মতামত, পছন্দ ও অধিকার থাকবে।" এর মাধ্যমে তিনি একদিকে সরকারবিরোধী রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে সমন্বয়ের আহ্বান জানিয়েছেন, অন্যদিকে দেশের জনগণকেও আন্দোলনে অংশগ্রহণের আহ্বান জানিয়েছেন।

ফ্যাসিবাদী শাসন ও সরকারের বিরুদ্ধে সংগ্রাম

ফখরুল ইসলাম আলমগীর বারবার বর্তমান সরকারকে ‘ফ্যাসিবাদী’ শাসক বলে অভিহিত করেছেন এবং দাবি করেছেন যে, এ ধরনের শাসনব্যবস্থার বিরোধিতা করা একটি মৌলিক প্রয়োজনীয়তা। তার মতে, দেশে গণতন্ত্র, মৌলিক অধিকার এবং মানবাধিকার রক্ষার্থে বৃহত্তর জনগণের অংশগ্রহণ আবশ্যক। ফ্যাসিবাদী সরকারের বিরুদ্ধে এই সংগ্রামে তিনি বিএনপি ছাড়াও অন্যান্য রাজনৈতিক দল, নাগরিক সমাজ, শ্রমিক সংগঠন এবং সাধারণ মানুষকে একত্রিত করার ডাক দিয়েছেন।

এটি একটি রাজনৈতিক ঘোষণা, যেখানে ফখরুল বুঝাতে চাচ্ছেন যে, দেশের সামগ্রিক পরিস্থিতি পরিবর্তন করতে হলে সকল শক্তি একত্রিত হয়ে সরকারের বিরুদ্ধে প্রতিরোধ গড়ে তুলতে হবে। এই জাতীয় সংগ্রাম শুধু বিএনপির নয়, বরং দেশের প্রতিটি নাগরিকের সংগ্রাম হতে হবে। এবং এই সংগ্রামটি একমাত্র জনগণের শক্তিতে ভিত্তি করে সফল হতে পারে।

এটি একটি নতুন রাজনৈতিক দৃষ্টিভঙ্গি?

ফখরুলের বক্তব্য একটি নতুন রাজনৈতিক দৃষ্টিভঙ্গি তুলে ধরছে, যেখানে দলগত রাজনীতি নয়, বরং জাতীয় ঐক্য ও সকল অংশগ্রহণের ভিত্তিতে সরকার গঠন করার কথা বলা হচ্ছে। এটি এমন একটি অবস্থান, যা বাংলাদেশের রাজনৈতিক landscape-এ একটি নতুন দ্বার উন্মোচন করতে পারে। একদিকে এটি বিএনপির গণতান্ত্রিক আন্দোলনের স্বীকৃতি হিসেবে দেখা যেতে পারে, অন্যদিকে দেশের অন্যান্য রাজনৈতিক দলগুলোও এই ধরনের জাতীয় ঐক্যের ধারণা গ্রহণ করতে পারে।

ফখরুলের বক্তব্য দেশের রাজনৈতিক পরিস্থিতির প্রতি জনগণের উদ্বেগ এবং প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণের গুরুত্বও তুলে ধরেছে। যদি বিএনপি এবং অন্যান্য রাজনৈতিক দলগুলো একত্রিত হতে সক্ষম হয় এবং জনগণ এই সংগ্রামে যোগ দেয়, তবে তারা সত্যিই একটি গণতান্ত্রিক এবং জনগণের সরকার প্রতিষ্ঠা করতে সক্ষম হতে পারে।

উপসংহার

মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরের "ফ্যাসিবাদবিরোধী লড়াইয়ের সবাইকে নিয়ে সরকার গড়বে বিএনপি"—এই বক্তব্যটি বাংলাদেশের বর্তমান রাজনৈতিক পরিস্থিতি এবং ভবিষ্যতের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ একটি বার্তা। এটি সরকারবিরোধী আন্দোলনের নতুন মোড়কে নিয়ে এসেছে এবং একটি বৃহত্তর রাজনৈতিক ঐক্য প্রতিষ্ঠার ডাক দিয়েছে। ফ্যাসিবাদবিরোধী সংগ্রামে সকলের অংশগ্রহণ নিশ্চিত করতে হবে এবং একটি সুশাসিত, গণতান্ত্রিক রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার জন্য সবাইকে একত্রিত হতে হবে।

Previous Post Next Post
'; (function() { var dsq = document.createElement('script'); dsq.type = 'text/javascript'; dsq.async = true; dsq.src = '//' + disqus_shortname + '.disqus.com/embed.js'; (document.getElementsByTagName('head')[0] || document.getElementsByTagName('body')[0]).appendChild(dsq); })();

sa

as