ছাত্রলীগের নেতাদের ব্যাপক গ্রেপ্তারকে সমর্থন করেন না হাসনাত-সারজিস
বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সমন্বয়ক এবং জুলাই স্মৃতি সংসদের সদস্য সচিব সারজিস আলম ছাত্রলীগের পদধারীদের গণহারে গ্রেপ্তারের বিরুদ্ধে মত প্রকাশ করেছেন। তিনি সোমবার (২৮ অক্টোবর) ফেসবুকে একটি পোস্টে এ তথ্য জানান।
সারজিস আলম বলেন, "যারা ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আবাসিক হলে বসবাস করছেন তাদের ভালোভাবে জানা আছে যে, এখানে থাকতেই হলে ছাত্রলীগের সঙ্গে সংযুক্ত হতে হয়েছে। তাদের অনুষ্ঠানে অংশ নিতে হতো এবং গেস্টরুম ব্যবহার করতে হতো। গণরুমে থাকতে হত। এমন পরিস্থিতিতে আবাসিক হলে যারা অবস্থান করতেন, তাদের মধ্যে অধিকাংশই এমন কর্মকাণ্ডে যেন বাধ্য হয়েই যুক্ত হন।"
তিনি আরও যোগ করেছেন, "এবার অন্য একটি বিষয়ের দিকে এগোই। হলের ছাত্রলীগ কমিটিতে প্রায় ৮০ শতাংশ শিক্ষার্থী যুক্ত থাকতো বিভিন্ন কারণে, যেমন: ১. একটি ভালো রুম বা আসন পাওয়ার জন্য, ২. চাকরি পাওয়ার আগে হলে থাকতে সক্ষম হওয়া, ৩. অন্যরা যেন তার প্রতি অন্যায় আচরণ না করে বা ট্যাগ না দেয়। বাকি ২০ শতাংশের মধ্যে অনেকেই ক্ষমতার সুবিধা নিতে চাইতেন।
সারজিস উল্লেখ করেন, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের এই প্রথম পদক্ষেপের ১৬-১৭ দিনব্যাপী আন্দোলনে ৮০% শিক্ষার্থী অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছেন। তারা শুধু পদপ্রাপ্ত ছিলেন না, বরং হলের তুলনামূলকভাবে পরিষ্কার ইমেজের প্রতিনিধিত্বও করছিলেন। এই শিক্ষার্থীরা ব্যানার হাতে নিয়ে সংগঠিত হয়ে আন্দোলনে অংশগ্রহণ করলে সাধারণ শিক্ষার্থীরা তাদের সাথে যুক্ত হতে সাহস পেয়েছিল, এবং এই কারণেই পদপ্রার্থীরা হল থেকে বিভিন্ন কার্যক্রম নিয়ে আন্দোলন প্রতিরোধ করতে সক্ষম হয়নি।
তিনি আরো জানান, “যদি এই পোস্টেড ছাত্রেরা হল থেকে একত্রে না বের হতো, তাহলে নন-পোস্টেড শিক্ষার্থীরা একত্রিত হয়ে বের হওয়ার সাহস পেত না। এই গুণাবলী এবং সাহস তারা দেখাতে সক্ষম হয়। হলের দৃষ্টিকোণ থেকে সত্য হল, এই পোস্টেড শিক্ষার্থীরাই হলের পরিষ্কার ইমেজ নিয়ে আন্দোলনে এসেছিলেন, যার কারণে ১ জুলাই থেকে ১৫ জুলাই পর্যন্ত আন্দোলনটি সম্ভব হয়েছিল এবং এটিকে অন্য কোনো দলের বা সরকারবিরোধী লেবেল লাগানোর সুযোগ ছিল না।”
সারজিস উল্লেখ করেছেন যে, যদি আন্দোলনে অংশগ্রহণ না করা হয় ১৫ জুলাইয়ের মধ্যে, তবে ৫ আগস্টের ঘটনার সম্ভাবনা নিয়ে একাধিক প্রশ্ন উঠতে পারে। এই প্রসঙ্গে তিনি প্রশ্ন তুলেন, হলের নথিভুক্ত ছাত্রদের মধ্যে কিছু বিশেষ ব্যক্তিকে ছাত্রলীগের কাঠামোর আন্ডারে নিষিদ্ধ করার চিন্তা করবেন কিনা। জবাব এসেছিল, তিনি তা করবেন না। ১ জুলাইয়ের পর যারা ন্যায়ের পক্ষে, নিজেদের জীবন রক্ষার জন্য, রাজপথে দাঁড়িয়ে ছিলেন, তারা এই পরীক্ষায় সফলভাবে উত্তীর্ণ হয়েছেন। বাস্তবতা হলো, আন্দোলন যদি সফল না হয়, তবে তাদেরই সবচেয়ে বেশি সমস্যার সম্মুখীন হতে হত। সেক্ষেত্রে তাদের বিশ্বাসঘাতক হিসেবে চিহ্নিত করা হতো।
সিস্টেমের দায়ভার সবার ওপর বর্তায়, এ কথা উল্লেখ করে তিনি বলেন, যে সিস্টেমের কারণে কিছু ছাত্রকে বাধ্য হয়ে ছাত্রলীগের রাজনীতি করতে হয়েছে এবং পদ নিতে হয়েছে, সেই সিস্টেমের জন্য দায়ী হতে হলে সকলকেই দায়ী হতে হবে। কারণ, আপনারা নীরব ছিলেন। ক্যাম্পাসে প্রতিদিন যেসব অন্যায় ঘটে চলেছে, সেগুলোর কোনো প্রতিরোধ আপনারা করেননি। যদি তারা নিরাপত্তার স্বার্থে পদ গ্রহণ করে, তাহলে আপনিও নিজেদের রক্ষা করতে চুপ ছিলেন। বরং, যখনই সুযোগ এসেছে, তারা সাহসিকতার সঙ্গে একত্রিত হয়ে রাজপথে নেমেছে, অথচ আপনি তখনও নীরব দর্শক হিসেবে পালন করেছেন।
তিনি গণহারে গ্রেপ্তারের সিদ্ধান্তকে সমর্থন করেন না এবং উল্লেখ করেন যে, এই ৮০ শতাংশ ছাত্রের মধ্যে যদি কেউ পূর্বে কোনো অন্যায় কর্মকাণ্ডে লিপ্ত থাকে, তবে তার শাস্তির জন্য যথাযথ তদন্ত হওয়া উচিত। একইভাবে, যদি কেউ পরবর্তীতে অন্যায় কাজে জড়িত হয়, সেক্ষেত্রেও তদন্তের ভিত্তিতে তার শাস্তি হওয়া জরুরি। তবে, তিনি জানান, যখন সময়ের প্রয়োজন ছিল, তখন রাজপথে নেমে আসা ছাত্রলীগের সদস্যদের সহজে গ্রেপ্তার করা যাবে—এমন ধারণা তিনি কোনোভাবেই সমর্থন করেন না। এটি কখনোই গ্রহণযোগ্য নয়। যারা সংকটের সময়ে ন্যায়বিচারের পক্ষে দাঁড়িয়ে জীবন বাজি রেখেছিল, তারা তাঁর ভাই। তিনি এই ভাইদের প্রতি সদা সহানুভূতিশীল থাকবেন।
এদিকে গণহারে গ্রেপ্তারের বিষয়ে মন্তব্য করতে গিয়ে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের আহ্বায়ক হাসনাত আব্দুল্লাহ বলেন, যারা ছাত্রলীগের সদস্য, তাদের মধ্যে এক দফার সমর্থক ছিল না। যেসব ব্যক্তি এক দফার পক্ষে অবস্থান নিয়েছিলেন, তারা ছাত্রলীগের সদস্য হিসাবে গণ্য হয় না। এক দফার পক্ষে দাঁড়িয়ে ছাত্রলীগ থেকে পদত্যাগ করে ফ্যাসিবাদের বিরুদ্ধে যারা সংগ্রাম করেছেন, তাদের বিরুদ্ধে মামলা এবং হয়রানি করা আদৌ যুক্তিসঙ্গত নয়।
তিনি আরও যুক্ত করেন, ভবিষ্যতে প্রজাতন্ত্রের কর্মে নিয়োগের সময় তাদের পূর্বসূরি ছাত্রলীগের পরিচয়কে আমলে না নেয়া উচিত, যদি না তারা ছাত্রলীগের সদস্য থাকাকালীন বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষার্থী নির্যাতন কিংবা নিয়মিত কার্যক্রমে প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করার সঙ্গে জড়িত থাকে।