দ্রব্যমূল্য নিয়ন্ত্রণে না এলে সাধারণ মানুষ রাস্তায় প্রতিবাদে নেমে আসতে পারে: এ মন্তব্য করেছেন সমন্বয়ক হাসনাত আবদুল্লাহ।
বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের অন্যতম সমন্বয়ক হাসনাত আবদুল্লাহফাইল ছবি
বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সমন্বয়ক হাসনাত আবদুল্লাহ মন্তব্য করেছেন যে, যদি দ্রব্যমূল্য সাধারণ মানুষের পক্ষে গ্রহণযোগ্য পর্যায়ে আনা না যায়, তবে জনগণ এই সরকারের বিরুদ্ধে আন্দোলনে নামতে পারে। হঠাৎ করে দ্রব্যমূল্যের বৃদ্ধি তিনি ফ্যাসিবাদের একটি চক্রান্ত বলে অভিহিত করেছেন।
শুক্রবার বিকেলে রাজধানীর মিরপুর-১০ নম্বরের ফায়ার সার্ভিস মাঠে অনুষ্ঠিত এক মতবিনিময় সভায় অংশ নিয়ে তিনি এ কথা বলেন। এই সভার আয়োজন করে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন, বৃহত্তর মিরপুর।
অন্তর্বর্তী সরকারের উদ্দেশে হাসনাত আবদুল্লাহ আরও বলেন, "যতদিন না দ্রব্যমূল্য সাধারণ মানুষের নাগালের মধ্যে আনা যাচ্ছে এবং যানজটের সমস্যা সমাধান করা হচ্ছে, ততদিন সাধারণ মানুষ হতাশ হয়ে পড়বে। দ্রুতই এসব সমস্যা সমাধান করুন। অন্যথায়, যেকোনো সময় জনগণ রাস্তায় নেমে আসতে পারে এই সরকারের বিরুদ্ধে।"
হাসনাত আবদুল্লাহ মন্তব্য করেন যে, স্বচ্ছতা, নৈতিকতা, সত্য এবং বাংলাদেশের প্রসঙ্গে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন শুরু থেকেই দৃঢ় প্রতিজ্ঞ। তিনি বলেন, ফ্যাসিবাদ মুক্তির যাত্রা তখন পর্যন্ত সফল হবে না, যতক্ষণ না এই দেশে ফ্যাসিবাদী ব্যবস্থাকে সম্পূর্ণরূপে উচ্ছেদ করা হয়। আবদুল্লাহ উল্লেখ করেন, “ফ্যাসিবাদ, বিচারের ব্যবস্থা, নতুন রাজনৈতিক কাঠামো— এগুলো শুনে আমাদের দুর্দশার অবসান হবে না। যখন বাজারে জিনিসপত্রের দাম অস্বাভাবিকভাবে বেড়ে যায় এবং রাস্তায় ঘণ্টার পর ঘণ্টা যানজটে আটকে থাকতে হয়, তখন আমাদের মনের মধ্যে স্বাভাবিকভাবেই এ ধারণা জন্ম নেয় যে 'পূর্বের দিনগুলোই ছিল ভালো'।” তিনি সম্প্রতি দাম বৃদ্ধির এবং যানজটকে ফ্যাসিবাদের ‘চূড়ান্ত চক্রান্ত’ হিসেবে উল্লেখ করেছেন।
বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের অপর সমন্বয়ক সারজিস আলম সমবেত ছাত্র ও জনতার উদ্দেশ্যে জানান যে, "ছোট ছোট মতবিরোধ, বিভাজন এবং ভুল বোঝাবুঝির কারণে আমাদের অভ্যুত্থানের স্পিরিট ক্ষয়িষ্ণু হচ্ছে।"
সারজিস উল্লেখ করেন, ‘এই মনোভাবের প্রেক্ষাপটে, যতোক্ষণ না জনগণের ভোটে নির্বাচিত একটি সরকার প্রতিষ্ঠিত হচ্ছে, ততোক্ষণ ফ্যাসিস্টদের সহযোগীরা বিভিন্ন রূপে পরিবর্তিত হয়ে, বিভিন্ন গোষ্ঠীতে ভাগ হয়ে আপনার মধ্যে প্রবেশ করবে। তারা বিভাজন ঘটিয়ে আপনাদের মুখোমুখি দাঁড় করাতে চেষ্টা করবে, নানা স্বার্থের লোভ দেখিয়ে সংঘর্ষ সৃষ্টি করবে, ফলে আপনাদের ক্ষতি হবে।’ তিনি আরও বলেন, ‘যদি টাকার লোভ দেখানো হয়, তাহলে লুটেরা ও অত্যাচারীরা, যেমন সালমান এফ রহমান, সাবেক আইনমন্ত্রী আনিসুল হক এবং সাবেক তথ্যপ্রযুক্তি প্রতিমন্ত্রী জুনাইদ আহ্মেদ পলক, তাদের হাতকড়া পরা অবস্থায় আদালতে যাওয়ার দৃশ্যটি মনে রাখবেন। সেই ভিডিওটি আপনার টাইমলাইনে সংরক্ষণ করুন।’
আন্দোলনের সময় আহত ব্যক্তিদের মামলা দায়ের করতে গিয়ে এখনও হয়রানির শিকার হওয়ার বিষয়টি উল্লেখ করেন সারজিস। তিনি জানান, “যে পুলিশ এখনও মামলা নিতে সময়ক্ষেপণ করছে এবং আসামী ধরতে অর্থের জন্য বসে আছে, সেই পুলিশকে আমরা ছাত্র-জনতার পুলিশ হিসেবে মনে করি না, কারণ তারা অভ্যুত্থানের আদর্শকে ধারণ করেনি।”
সমাবেশে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সমন্বয়ক তারিকুল ইসলাম ও আবদুল কাদেরের বক্তব্যও শোনা যায়। আবদুল কাদের বলেন, "৫ আগস্টের পর আন্দোলনকারীদের মধ্যে বিভাজন সৃষ্টি হওয়ায় আমরা হতাশ," এবং তারিকুল ইসলাম উল্লেখ করেন, “ফ্যাসিবাদ নির্মূলের সংগ্রাম শেষ না হওয়া পর্যন্ত আমরা রাজপথে থাকব।”